SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

এসএসসি(ভোকেশনাল) - শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং-১ - প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি) | NCTB BOOK

চিংড়ি চাষের সফলতা মূলত সঠিক ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ, স্থান, দক্ষতা, পুঁজি, অবকাঠামোগত সুবিধা, উপকরণ সরবরাহ ইত্যাদি অনেকগুলো বিষয়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত। সাধারণভাবে আধুনিক চিংড়ি চাষ ব্যবস্থাপনাতে আশানুরূপ ফলন পেতে হলে সঠিকভাবে অবকাঠামো নির্মাণ ও এর যথাযথ সংরক্ষণ একান্ত প্রয়োজন। খামারের সঠিক নকশা প্রণয়নপূর্বক খামারে নিম্নোক্ত অবকাঠামোসমূহ নির্মিত হওয়া আবশ্যক।

ক. বেষ্টনী বাঁধ: উন্নত পদ্ধতির বাগদা চিংড়ি চাষে ঘেরের বাঁধ বা পাড় নির্মাণ করার সময় নিম্নোক্ত বিষয়সমূহ খেয়াল রাখতে হবে।

১) ঘেরের বাঁধ দৃঢ় এবং মজবুত হতে হবে, যাতে করে পানি ঘের থেকে বেরিয়ে না যায় এবং বাইরে থেকে পানি ঢুকতে না পারে।

 ২) বাঁধের উচ্চতা হবে ৮ ফুটের অধিক এবং তলা হবে ১২-১৬ ফুট, উভয় দিকের ঢালের (মাটির ধরন অনুযায়ী) অনুপাত হবে ১ঃ ২ হতে ১ঃ ১.৫।

৩) ঘেরের পাড়ের চূড়া অন্তত ২ ফুট প্রশস্ত হবে, পাড়ের উভর ঢালে ঘাসের ছাপ সংগ্রহ করে লাগানো যেতে পারে। 

খ. পুকুরের বাঁধ বা অভ্যন্তরীণ বাঁধ: খামারের অভ্যন্তরীণ বাঁধ এমনভাবে নির্মাণ করতে হবে যেন চাষ এলাকায় ১-২ মিটার পানি ধরে রাখা যায় অর্থাৎ বাঁধের উচ্চতা কমপেক্ষ ১.৫ মিটার হতে হবে। তবে স্তরে মাটি কমপ্যাক্ট করে বাঁধ খুব মজবুতভাবে নির্মাণ করতে হবে, যাতে চাষ এলাকা বা পুকুরের পানি বের হয়ে না যায় এবং বাইরের পানি পুকুরে প্রবেশ করতে না পারে। পুকুরের পাড় যাতে ধসে না যায় বা অতিবৃষ্টির ফলে বাঁধের মাটি ধুইয়ে ক্ষয় হয়ে না যায় সে জন্য বাঁধের পায়ে দুর্বা জাতীয় ঘাস অথবা পুকুরে ছায়া সৃষ্টি করবে না এ রকম গাছ লাগাতে হবে। একটি বাঁধ নির্মাণ করার সময় বিভিন্ন স্থানের পরিমাপ নিচের চিত্রের সাহায্যে বর্ণনা করা হলো:

চিত্রে ৬ ফুট গভীরতা সম্পন্ন একটি নার্সারি পুকুর, যার ঢাল জমির বাইরের দিক হতে বকচর পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ২০ ফুট, যেখানে ২ ফুট পর হতে মাটি ফেলা হয়েছে। বাইরের ঢাল ৬ ফুট, বাঁধের উপরের দৈর্ঘ্য ৬ ফুট বাইরের বাঁধের ভিতরের ঢাল ৬ ফুট ও বকচর ২ ফুটসহ মোট ২০ ফুট। ঘেরের ভেতরের দৈর্ঘ্য ১৫ ফুট যার মধ্যে ২ ফুট বকচর ভেতরের দিকে ঢাল ৪ ফুট, ভিতরের বাঁধের উপরের দৈর্ঘ্য ৫ ফুট ও ভেতরের বাঁধের বাইরের ঢাল ৪ ফুট। বাঁধের উচ্চতা নির্ভর করে উক্ত স্থানের বন্যার পানির উচ্চতা, মাটির গঠন ও পুকুরের ব্যবস্থাপনা সুবিধার উপর।

গ. নার্সারি পুকুর: চিংড়ি পোনার সুষম বৃদ্ধি ও পোনার মৃত্যুহার নুন্যতম পর্যায়ে রাখার জন্য নার্সারি পুকুর ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরি। নার্সারি পুকুর যথাযথভাবে তৈরি করতে হবে। এর ফলে পোনার মজুদকালীন মৃত্যুহারও কমে যাবে এবং পোনা দ্রুত বাড়বে। এ ক্ষেত্রে পালনীয় কাজগুলো হলো:

১) নার্সারিতে যাতে ৩ থেকে ৪ ফুট পানি থাকে সে অনুপাতে পুকুর খনন করতে হবে।

২) ঘন মশারির নেট দিয়ে নার্সারি নির্মাণ করতে হবে। 

৩) নার্সারির নেট পানির উপরে এক হাত পরিমাণ বাড়তি রাখতে হবে এবং তার মাটিতে কাদার পরিমাণ ৫-৬ ইঞ্চির বেশি হওয়া যাবে না।

৪) পুকুরের পাড় অবশ্যই উঁচু, মজবুত ও বন্যামুক্ত হতে হবে।

৫) ব্যবস্থাপনার সুবিধার জন্য বাড়ির কাছাকাছি হওয়া ভালো।

৬) পুকুরে প্রচুর সূর্যের আলো এবং বাতাস থাকার ব্যবস্থা থাকতে হবে যাতে নার্সারি পুকুরে কমপক্ষে দিনে ৬-৮ ঘন্টা সূর্যের আলো পড়ে।

চিত্র-২.১: একটি আদর্শ নার্সারি পুকুর

ঘ. পালন পুকুর

উন্নত পদ্ধতির চিংড়ি চাষে পালন পুকুর নির্মাণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। যথাযথভাবে পালন পুকুরটি নির্মাণ করা হলে রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি বহুলাংশে কমে যাবে। পালন পুকুর তৈরিতে নিম্নের যে সকল বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে হয়-

১) পালন পুকুরের সব জায়গায় ৩ ফুটের অধিক পানি থাকতে হবে।

২) পালন পুকুরের পাড়ে গাছ-গাছালি ও ঝোপ-ঝাড় থাকলে তা পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। 

৩) পুরাতন পুকুরের ক্ষেত্রে তলা ভালভাবে শুকাতে হবে প্রয়োজনে কালো মাটি থাকলে সরিয়ে ফেলতে হবে।

৪) পালন পুকুরের তলদেশ সমান হতে হবে।

৫) দোআঁশ মাটি হলে পুকুরের ঢাল ১১.৫ এবং বেলে মাটি হলে পুকুরের ঢাল ১৪২০ হবে।

৬) এই পদ্ধতিতে একটি আদর্শ পালন পুকুরের আয়তন হওয়া উচিত অনধিক এক হেক্টর।

৭) দিনে কমপক্ষে ৬-৮ ঘণ্টা পর্যাপ্ত সূর্যালোকে থাকতে হবে।

৮) পুকুরের পাড় অবশ্যই উঁচু ও মজবুত হতে হবে।

চিত্র-২.২: একটি আদর্শ পালন পুকুর

ঙ. রিজার্ভার নির্মাণঃ জরুরি প্রয়োজনে পরিশোধিত পানি সরবরাহের জন্য মূল/পালন পুকুরের পাশে একটি ৫- ৬ ফুট গভীর রিজার্ভার নির্মাণ করতে হবে। রিজার্ভারের আয়তন পালন পুকুরের চার ভাগের এক ভাগ হতে পারে। সর্বোপরী রিজার্ভারের চারপাশে জালের বেড়া থাকতে হবে।।

চ. ফ্লুইস গেট নির্মাণ: বাগদা চিংড়ি চাষের জন্য ফ্লুইস গেট নির্মাণ অত্যন্ত প্রয়োজন। ব্লুইস গেটের মাধ্যমে পুকুরে পানি সরবরাহ ও পুকুর থেকে পানি নিষ্কাশন করা হয়। এজন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক পরিমিত আকারের ফ্লুইস গেট নির্মাণ করতে হবে। চাষ এলাকায় ঘেরে পানির নিশ্চয়তার জন্য প্রতিটি জোয়ারে ৩০ শতাংশ পানি যাতে সরবরাহ করা যায় এমনভাবে পেট নির্মাণ করতে হবে।

চিত্র-২.৩: চিংড়ি ঘেরে ফ্লুইস গেট

পানি সরবরাহ গেট পুকুরের তলা থেকে কিছুটা উপরে এবং নিষ্কাশন গেট পুকুরের তলা থেকে কিছুটা নিচুতে স্থাপন করা দরকার। এতে পুকুরে সঠিকভাবে পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশন করা যায়। ফ্লুইস গেট কাঠের, আরসিসি পাইপ বা পিভিসি পাইপ অথবা সিমেন্ট দ্বারা নির্মাণ করা যায়। ফ্লুইস গেট সাধারণত দু'ধরনের হয়ে থাকে, যথা- প্রধান ফ্লুইস গেট ও গৌণ বা অপ্রধান ফ্লুইস গেট। বেষ্টনী বাঁধের উৎসের নিকট যে গেট নির্মাণ করা হয় তাকে প্রধান ফ্লুইস গেট এবং পুকুরের পাড়ে যে গেট নির্মাণ করা হয় তাকে গৌণ ফ্লুইস গেট বলে। পানি সরবরাহ খালে পানি সরবরাহ করার জন্য সাধারণত প্রধান ফ্লুইস গেট ব্যবহার করা হয় এবং সরবরাহ খাল থেকে পুকুরে পানি সরবরাহ করার জন্য গৌণ ফ্লুইস গেট ব্যবহার করা হয়। একটি কাঠের ফ্লুইস গেট নির্মাণের সময় নিচের বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে-

১) ফ্লুইস গেটে বা গেটসমূহের আকার বা সংখ্যা এমন হতে হবে যাতে নির্ধারিত সময়ে খামারে পানি প্রবেশ করানো যায় বা সময়মত খামার থেকে পানি বের করা যায়।

২) খামারের এমন স্থানে গেট নির্মাণ করতে হবে যাতে খামারের সমস্ত পানি বের করা সম্ভব হয়। গেটে ছোট ছিদ্রযুক্ত জাল, আহরণ জাল ও ফল বোর্ড বসানোর ব্যবস্থা থাকতে হবে। 

৩) পেট পানি নিরোধক হতে হবে যাতে গেটের পার্শ্বে বা তলা দিয়ে পানি প্রবেশ করতে বা পানি বের হয়ে যেতে না পারে।

৪) গেটের তলদেশ দিয়ে পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে।

৫) গেটের উপরিভাগ দিয়ে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে।

৬) গেটের ডিজাইন এমন হতে হবে যেন সহজে পরিচালনা করা যায় । 

পুকুরে পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশনের কাজ ৪-৬ ঘন্টার মধ্যে সম্পন্ন করার ব্যবস্থা থাকা দরকার। নিষ্কাশন কাজ যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা যায় সেজন্য পুকুরের তলদেশ পানি সরবরাহ করানোর গেটের দিক থেকে পানি নিষ্কাশন গেটের দিকে ঢালু হতে হবে। পানি সরবরাহ ফ্লুইস গেটের মুখে সূক্ষ ছিদ্রযুক্ত জাল স্থাপন করে রাক্ষুসে মাছ ও অন্যান্য অবাঞ্ছিত জলজ প্রাণীর খামারে প্রবেশ বন্ধ করা যায়। আর নিষ্কাশন ফ্লুইস গেটের মুখে জাল স্থাপন করে অতি সহজেই চিংড়ি আহরণ করা যায়।

ছ. গার্ড শেড, বাসস্থান ও ভান্ডার নির্মাণ: গার্ড শেড, বাসস্থান ও ভান্ডার খামার অবকাঠামোর অন্যতম উপাদান। খামারের প্রয়োজনীয় উপকরণাদি যেমন- চুন, সার, খাদ্য, যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম ইত্যাদি রাখার জন্য উপযুক্ত ভান্ডার থাকা দরকার। খামারের ভান্ডারটি শুষ্ক স্থানে হওয়া উচিত। এছাড়া খামারের শ্রমিকসহ খামার পরিচালনায় নিয়োজিত অন্যান্য জনবলের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থান থাকা একান্ত অপরিহার্য। কর্মরত জনবলের জন্য পর্যাপ্ত স্যানিটেশন ব্যবস্থাও অত্যন্ত জরুরি। তাছাড়া খামারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংখ্যক গার্ড শেড নির্মাণ করতে হবে।

Content added By